
আপনি কি এই সমস্যা গুলোয় ভুগছেন ?
নাক বন্ধ হওয়া ও সর্দি জমা
গলা ব্যথা
মাথা ব্যথা
মাংসপেশীতে ব্যথা, বিশেষত পিঠ এবং থাই এর পিছন দিকে বা dorsal অংশে
কাশি ও হাঁচি
হালকা থেকে বেশি জ্বর
স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে যাওয়া
শীতের অনুভূতি, কাঁপুনি
শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ ধরার অনুভূতি
অতিরিক্ত শারীরিক ক্লান্তি
এটি ভাইরাস সংক্রমণজনিত সমস্যা, যা সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রনিক এবং মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে !
সর্দিজ্বরের কারণ
সর্দিজ্বরের প্রধান কারণ ভাইরাস সংক্রমণ। বেশ কিছু ভিন্ন ধরনের ভাইরাস সর্দিজ্বর সৃষ্টি করে, যার মধ্যে সম্প্রতি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী HMPV (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) একটি।
শীতের সময় ঠান্ডা বা সর্দি-জ্বর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়, কারণ এই সময় ভাইরাসগুলো বেশি সংক্রমিত হয়। সর্দি-জ্বরের সময় ভাইরাস নাসারন্ধ্রের মিউকাস লাইনিং অতিক্রম করে ঢুকে যায় এবং এর ফলে নাসারন্ধ্রে অতিরিক্ত সর্দি জমে যায়, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে 'রাইনোরিয়া' নামে পরিচিত।

HMPV হলো শ্বাসতন্ত্রের একটি ভাইরাস, যা সর্দিজ্বর, কাশি, এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। যা সাধারণত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বেশি আক্রান্ত করে। ভাইরাসটি প্রথমবার ২০০১ সালে চিহ্নিত হয় এবং এটি ফ্লু ও রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাসের (RSV) মতো সংক্রমণ ঘটায়। শীতকাল বা ঋতু পরিবর্তনের সময় HMPV সংক্রমণের হার বেশি দেখা যায়।
HMPV আক্রান্ত হলে কি কি উপসর্গ দেখা দিতে পারে ?
সর্দি ও কাশি
জ্বর
গলা ব্যথা
শ্বাসকষ্ট
শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো নিউমোনিয়ার ঝুঁকি।
ঘটনা হল ,এই ধরনের উপসর্গ অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রেও দেখা দেয় !
সর্দিজ্বর এবং HMPV থেকে বাঁচার জন্য এই তিনটি সাবধানতা অবলম্বন করুন
১ - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
সাবান ও গরম জল দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া।
চোখ, মুখ, নাক স্পর্শ করা এড়িয়ে চলা।
আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
২ - শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
ভিটামিন এ, সি এবং ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
ভিটামিন এ: মিষ্টি আলু, বিট, গাজর।
ভিটামিন সি: কমলা, লেবু, আম, তরমুজ।
ভিটামিন ডি: সূর্যের আলো থেকে বা সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে।
পেঁয়াজ ও রসুন নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়।
পর্যাপ্ত জল বা তরল পানীয় পান করে শরীরের জলশূন্যতা দূর করুন। ORS ও খুব কাজের হতে পারে
৩ - উষ্ণ পরিবেশ
ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরমের পোশাক ছাড়া বের হবেন না এবং কান , গলা ও বুক পশম জাতীয় পোশাকে ঢেকে রাখুন ! মোজা পরুন !
HMPV শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা
HMPV ভাইরাস শনাক্ত করতে বিশেষ ল্যাব টেস্ট প্রয়োজন। উপসর্গ তীব্র হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসা:
HMPV ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়:
জ্বর কমাতে সাধারণত প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নিতে বলেন ডাক্তাররা ।
প্রচুর জল পান এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার।
শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে নেবুলাইজার ও অক্সিজেন সাপোর্ট নিতে হবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
সর্দিজ্বর ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
জ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে।
প্রবল শ্বাসকষ্ট থাকলে, বুকে ব্যথা বা শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দিলে।
সর্দিজ্বর বা HMPV ভাইরাস সাধারণত গুরুতর রোগ নয়, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষায় নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন!
Comments